রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনো বিচারপ্রার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন বিচারকদের তেমনি আইনজীবী ও এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার।’

আইনের আশ্রয় নিয়ে বিচারপ্রার্থী যেন বিড়ালের জন্য গরু হারিয়ে না ফেলে তা বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বিচার বিভাগ সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে এমন আশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত সময়ে রায় দেয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

কিশোরগঞ্জে রোববার বিকেলে নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ‘রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভবন’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী আয়োজনে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি।

আবদুল হামিদ বলেন, “আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে ‘একটি বিড়ালের জন্য একটি গরু হারানো’র সেই চীনা প্রবাদের মতো যাতে বিচারপ্রার্থীদের অবস্থা না হয়, বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। কোনো বিচারপ্রার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন বিচারকদের তেমনি আইনজীবী ও এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার।’

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গরিব ও অসহায় লোকজন আইনি সহায়তা পাচ্ছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ আমার নিজের জেলা। এ জেলার সঙ্গে রয়েছে আমার প্রাণের বন্ধন। তাই কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধন আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারণ, অত্যাধুনিক এই ভবনের মাধ্যমে জেলার বিচারপ্রার্থী মানুষ দ্রুততম সময়ে বিচারিক সেবা পাবে। এছাড়া বিচার প্রার্থীরা আদালতে এসে সুন্দর পরিবেশ পাবে, এটিই আমার জন্য আনন্দের।’

নিজের পেশা জীবনের স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সঙ্গে আমার স্মৃতি প্রায় পাঁচ দশকের। যদিও ১৯৯৬ সালের পর থেকে সরাসরি কোর্টে যাওয়া হয় না। কিন্তু কিশোরগঞ্জের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ককে ভুলে থাকা যায় না। আমি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। কিশোরগঞ্জ আদালত ও আইনজীবী সমিতি আমার বৃহত্তর পরিবারেরই অংশ।’

কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের নাম রাখা হয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভবন’। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘এই ভবন কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিটি সদস্যের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আজ এই ভবনের নির্মান কাজের শুভ সূচনা হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা, এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণও আইনজীবীদের কাছ থেকে আরও উন্নত সেবা পাবে।

আবদুল হামিদ বলেন, “একজন আইনবিদ প্রতিবেশী হিসাবে ভালো নয়’ ফ্রাংকলিনের এ কথা যেন মিথ্যা প্রমাণ হয়। বিচারপ্রার্থী মানুষ আপনাদের কাছে আসে তাদের সমস্যার সমাধান ও ন্যায়বিচার পেতে সহায়তার জন্য। তারা যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”